শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত আইনগতভাবেই বাধ্য: মুনিরুজ্জামান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৪৭ দুপুর

বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে ভারত কার্যত আইনগতভাবেই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বাধ্য- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস)-এর সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান। শনিবার (২২ নভেম্বর) ঢাকায় আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর এক অধিবেশনে তিনি এই বক্তব্য দেন। অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় ভারত প্রায় আইনগতভাবেই তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য।”

তিনি আরও বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের আইনগত প্রক্রিয়াকে সম্মান জানিয়ে বিলম্ব ছাড়াই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো উচিত। “যদি ভারত আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি, নীতি-নৈতিকতা এবং আইন-শৃঙ্খলাকে সম্মান করে, তবে তাদের উচিত হবে প্রতিবেশী বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়া ও আইনগত কাঠামোকেও সমভাবে সম্মান জানানো।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনিরুজ্জামান দাবি করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং এই বিচারিক প্রক্রিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্মান করা উচিত। তার ভাষায়, “যদি সেই সম্মান বজায় থাকে, তবে সব দিক থেকেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোই হওয়া উচিত।”

তিনি এক প্রশ্ন তুলেন— “যদি বাংলাদেশ দণ্ডিত ভারতীয় নাগরিকদের আশ্রয় দিত এবং দিল্লির আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সত্ত্বেও ফেরত না পাঠাত, তবে ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাত?” তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের আইনে দণ্ডিত যেকোনো ব্যক্তিকে ভারত ফেরত পাঠাতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে। “সব দিক থেকেই আমাদের অবস্থান হলো— নয়াদিল্লি যেন অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।”

‘ফ্র্যাকচার্ড অর্ডার্স, ফ্লুইড লয়্যালটিজ: পাওয়ার পলিটিক্স ইন দ্য পোস্ট-অ্যালাইনমেন্ট এজ’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার টেইলরস বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়া রোকনিফার্ড, আগোরা স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের জোভান রাটকোভিচ, ব্রাজিলের এফজিভি ফাউন্ডেশনের লিওনার্দো পাজ নেভেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়ান ভিডাউরি। আলোচনাটি পরিচালনা করেন জার্মানির আরটিএল নর্ড-এর ডেভিড প্যাট্রিশিয়ান।

এদিকে শেখ হাসিনার প্রথম প্রত্যর্পণ অনুরোধ এখনও মীমাংসিত না হলেও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘অবিলম্বে হস্তান্তর’ করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত নৃশংসতার দায়ে তাদের দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায় ঘোষণার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়— মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের অন্য কোনো দেশে আশ্রয় দেওয়া হবে ‘অমিত্রসুলভ আচরণ’ এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Link copied!