বগুড়ায় তিন বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে। স্থানীয় এক পাখি ব্যবসায়ী তাঁর পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে অন্তত সাত হাজার ডলার নেওয়া হয়েছে। বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তিনি।
ভিটো সম্প্রতি নিজের ভিডিও করে পরিচিতদের কাছে পাঠান। সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। দেশে ফিরতে চাই। স্ত্রী আর সন্তানদের কাছে যেতে চাই।’ এই ভিডিওর সূত্র ধরে তাঁর খোঁজ পেয়েছে সমকাল।
গতকাল সোমবার মহাস্থানগড়ের গোকুল মেধের পেছনে উত্তরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় তিন তলা একটি বাড়ি। চারপাশে ঝাউগাছের জঙ্গল। নিচতলায় বাস করেন আখতারুজ্জামানের ছেলে পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান পলাশ। ওপর তলায় জাল টানিয়ে পাখি পালন করেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় পলাশ ও পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। নিচতলার অন্ধকার একটি কক্ষে দেখা মেলে ভিটোর। তিনি অভিযোগ করেন, ‘পলাশ আমাকে জিম্মি করে রেখেছে। ভিটো জানান, তিনি পাখির ব্যবসা করতেন।
তাঁর বাড়ি কঙ্গোর এভিগামার কিউ/ইলোসুড কালামু কিনসাশা গ্রামে। বাবার নাম বোঙ্গে জেনই। মায়ের নাম গাবি বোয়েকা। বৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাখি রপ্তানি করেন। এই সূত্রে পলাশের সঙ্গে তাঁর অনলাইনে পরিচয় হয়। পলাশ অনেক বেশি দামে পাখি কেনার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক মাস মেয়াদি টুরিস্ট ভিসায় ২০২২ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, তাঁর পাসপোর্ট নম্বর ওপি-১১৩৪৪৩২। বিমানবন্দরে নামার পর ভিটো সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০ ডলারের বিনিময়ে ৫০ হাজার ৭৫ টাকা নেন।
এরপর বের হয়ে আগে থেকে অপেক্ষমাণ পলাশের সঙ্গে বগুড়ায় তাঁর বাড়িতে আসেন। এক মাস পূরণ হওয়ার আগে ভিটো ফেরার প্রস্তুতি নেন। পলাশ তাঁর পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেন।
ভিটো জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পলাশের বাড়ি থেকে গোপনে বের হন। আরেক পাখি ব্যবসায়ী সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া সদর থানায় যান। লিখিত অভিযোগ করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসিরের সঙ্গে কথা বলেন। উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসানকে অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন ওসি। ১২ দিন পার হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তদন্ত বন্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বাদী।
ভিটো জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে তাঁর স্ত্রী গ্লোরিয়া এনটাঙ্গা মুটোম্বো কঙ্গোতে বাড়ি বেচে পলাশের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। এসব অর্থ নেওয়ার পরও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। কয়েক দফায় অনলাইন ব্যাংকিং ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ডলার নিয়েছেন। এখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘুমানোর জন্য প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়। দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী রোকসানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি। বাড়িতে তাঁর বোন পলি বেগম জানান, পলাশ বাড়িতে থাকে না। কোথায় থাকে, তা তারা জানেন না।
স্থানীয় পাখি ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, পলাশ আমার কাছ থেকেও প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা করছে।
তদন্তকারী এসআই মেহেদি হাসান বলেন, ‘আসামি ধরার জন্য রওনা হয়েছিলাম। মাঝ রাস্তায় গিয়ে শুনতে পাই, ঘটনা মীমাংসা করা হচ্ছে। এ কারণে আমি আর যাইনি। বাদীপক্ষ যোগাযোগও করেনি। এ জন্য এখনও আমরা চুপচাপ আছি।
আপনার মতামত লিখুন :