কলাপাড়ায় বিএনপি ছেড়ে চরমোনাই পীরের দলে যোগ দিলেন সাবেক এমপি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭ মে, ২০২৫, ১০:৩০ রাত

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। কলাপাড়ায় বিএনপির সাবেক সভাপতি ও অন্যতম প্রবীণ নেতা অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করেছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই দরবার শরীফে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের হাতে হাত রেখে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেন তিনি। দলে যোগদানের সময় তার সঙ্গে শতাধিক অনুসারী ও দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক কে এম শরীয়াতুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও মোস্তাফিজুর রহমানের পরিবার থেকে তাহার চাচাতো ভাই মো. হুমায়ুন কবির বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করেছেন।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী-মহিপুর) আসনে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর হাত পাখার প্রার্থী ঘোষণা হওয়া প্রশ্নের জবাবে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম কলাপাড়ায় এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাহার প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে স্বল্প সময়ের জন্য পটুয়াখালী-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে বহু চড়াই-উতরাই পার করলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা হয়ে ছিলেন বিএনপির এ নেতা।

সাবেক এই এমপির দল বদলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার অবসান, বিএনপির সঙ্গে অসন্তোষ ও কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা না পাওয়া এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণের লক্ষ্যেই ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এই দল বদল কি কেবল রাজনৈতিক কৌশল, নাকি আদর্শিক পরিবর্তন?—এ নিয়ে এখন সরব পুরো ১১৪, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী-মহিপুর) আসনের রাজনীতি। ভোটের মাঠে অধ্যাপক মোস্তাফিজ কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ইসলামী আন্দোলনের জন্য বড় ধরনের লাভ হতে পারে। বিশেষ করে পটুয়াখালী-৪ আসনে ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক ভিত্তি সম্প্রসারণে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

তবে এ নিয়ে এই মুহূর্তে বিএনপির এখানকার দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারপরও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদার জানান, তিনি বিএনপি থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন। দুই বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি যদি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেন তাইলে আমার দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মতে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এনিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান পীর সাহেবের কাছে গিয়ে তার দলে যোগ দিয়েছি এটি সত্যি। দীর্ঘদিন আমি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষপটে আমি মনে করি বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন সঠিক করছে। জীবনের শেষ বয়সে মানুষের জন্য কিছু করার জন্য তার এই দলে যোগ দেওয়া বলে জানান। আর প্রার্থী হিসেবে আমি নসিনেশন চাইবো। যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে এই আসন (পটুয়াখালী-৪) থেকে নির্বাচন করবেন।

ইসলামি আন্দোলন কলাপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুফতি মো হাবিবুর রহমান জানান, মুলত নির্বাচনী কোন শর্ত ছাড়াই তিনি পীর সাহেব চরমোনাইয়ের দলের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়ে ইসলামের খেদমত করতে আজকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এ যোগ দিয়েছেন।

Link copied!