দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নব্বইভাগই মোবাইলে ব্যবহার করেন। ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের নানা স্তরে মূল্যহ্রাসের উদ্যোগ থাকলেও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ও মান নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। এর জন্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের বরাদ্দ করা তরঙ্গের চড়া মূল্যকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই তরঙ্গ ব্যবহার করেই ওয়্যালেস সেবা পৌঁছে যায় গ্রাহক প্রান্তে।
মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্যহ্রাসে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসা তরঙ্গের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেও (বিটিআরসি)। তরঙ্গের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে চায় সংস্থাটি।
প্রযুক্তিবিদদের অভিমত, উচ্চকর হারের পাশাপাশি তরঙ্গের অতিরিক্ত দামের জন্য গ্রাহকপ্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেট খরচ কমছে না। প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বললেন, তরঙ্গের খরচটা যদি কমানো যায় তাহলে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে আরও অনেক দাম কমানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ইন্টারনেট সাশ্রয়ী করতে ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে ইতোমধ্যে। যা মোবাইল ইন্টারনেটের মোট খরচের মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আর মোট খরচের মধ্যে সঞ্চালনে খরচ হয় ৮ থেকে ৯ শতাংশ। যেখানে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা এসেছে।
মোবাইল অপারেটররা বলছে, উচ্চকর, রেভিনিউ শেয়ারিং ও অন্যান্য চার্জের পাশাপাশি সেবা পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে তরঙ্গ বরাদ্দে। যা মোট খরচের ১০ শতাংশের বেশি। বিশ্বের অনেক দেশ গ্রাহক স্বার্থে বিনামূল্যে তরঙ্গ ব্যবহারের সুযোগ দিলেও বিটিআরসি এখনো চড়া দামে তরঙ্গ বিক্রি করে আসছে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কর্পোরেট অফিসার শাহেদ আলম বলেন, তরঙ্গে ৯ শতাংশ বা তারও বেশি খরচ হচ্ছে। তরঙ্গের দাম কমানোর বিষয়ে কিন্তু সরকার কথা বলছে না। আমরা যতবারই বলি যে দাম কমান, তখন কিন্তু তেমন সাড়া পাই না। বা পেলেও এই জায়গাটাতে অনেকটা কাঁচা থেকে যায়।
সবশেষ দুইটি ব্যান্ডের নিলামে চার মোবাইল অপারেটরের কাছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় তরঙ্গ বিক্রি করে বিটিআরসি। সেবার মান বাড়াতে ৭শ’ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে তুলতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কমিশন। জুনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম ২৬৩ কোটি টাকা চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা
বিটিআরসির এমন তথ্যই বলে দেয়, তরঙ্গের দাম কতটা বেশি। যা পরোক্ষভাবে গ্রাহকের সেবার খরচ বাড়িয়ে দেয়।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেছেন, মোবাইল টেলিকমের ক্ষেত্রেও তরঙ্গের দাম কমানো হবে। কিন্তু দুইটার মধ্যে ফান্ডামেন্টাল পার্থক্য হচ্ছে দুইটাই আসছে দুই পথে। একটা ফিক্সড, আরেকটার সাথে এডিশনাল যে সার্ভিস আছে ওটা হচ্ছে মবিলিটি। যার ফলে মোবাইল ইন্টারনেটে খরচ বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দাম কমানোর জন্য আমরা একটা স্টাডি হতে নেয়ার চিন্তা করছি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে চারটি ব্যান্ডে গ্রামীণফোন ১০৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করছে। রবি ১০৪, বাংলালিংক ৮০ এবং টেলিটক ব্যবহার করছে করছে ৫৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।
আপনার মতামত লিখুন :