কুয়াকাটা,(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাখাইন লাচাউ (৮০) রাখাইন নারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে রাখাইনরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা–কুয়াকাটা মহাসড়কের আলীপুর থ্রী-পয়েন্ট এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন, রাখাইন সমাজ কল্যান সমিতি,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর যৌথ আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে পটুয়াখালীর মহিপুর থানা এলাকার কালাচান পাড়া, আমখোলা পাড়া, কেরানী পাড়া, মিশ্রি পাড়া, নাইউরী পাড়া, গোড়া আমখোলা পাড়া সহ বিভিন্ন পাড়ার রাখাইন সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষসহ নানা শ্রেনীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মংলাচিং মং, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লাচাউ এর বোনের ছেলে অংচাচান তালুকদার, মিসেস উখ্যান চান, ভুক্তভোগী ইউনুস মাষ্টার প্রমুখ।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী রাখাইনরা বলেন, রাখাইন সম্প্রদায় এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা হলেও একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী দম্পতি বিক্রি জমি দ্বিতীয় বার বিক্রির পায়তারা সহ তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নানাভাবে হয়রানির মাধ্যমে তাদের বসতভিটা ও অধিকার থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাখাইনরা অভিযোগ করেন, প্রবাসে থাকা অবস্থায় কালাচাঁন পাড়ার নিবাসী পিতা মৃত: সংথুই এর কন্যা মিসেস: লাচাট (৮০) বিগত ০৮ আগস্ট ২০০০ খ্রিষ্টদ্ধে তার স্বামী মি: অংশাচিং (৮৩) কে তার নিজ রেকর্ডীয় ভূমি, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত ভূমি ও সাব-কবলামূলে ক্রয়কৃত ভূমির দেখাশুনা, মামলা পরিচালনা ও বিক্রির ক্ষমতা (পাওয়ার অফ এ্যার্টনি) প্রদান করেন যা মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার'স বাংলাদেশ কর্তৃক ১০ সেপ্টেম্বর ২০০০ খ্রিঃ সত্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে মিসেস: লাচাউর স্বামী মি: অংশাচিং অত্র পাওয়ার অফ এ্যার্টনি'র/আমোক্তার ক্ষমতার বলে জমি দেখাশুনা ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কর্তৃক ১৯৫০ সালের প্রজাসত্ব আইনের ৯৭ ধারা অনুসারে রাখাইনদের ভূমি বিক্রির অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন লোকের নিকট সাব-কবলা মূলে বিক্রি করেন। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত অবস্থায় এবং ভূমির প্রকৃত মালিক মিসেস: লাচাউ তার স্বামী সাথে ২০০২,২০০৩,২০০৫ ও ২০০৮ সালে অবস্থান করেন। এবং একই সাথে তার ভূমিগুলো বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করতে থাকেন। ২০১০ সালে ১৭ এপ্রিল রোজ শনিবার কালাচাঁন পাড়া ত্যাগ করেন এবং ২০১০ সালে ২০ এপ্রিল রোজ মঙ্গলবার মালেশিয়া এয়ারলাইন্স এর রাত্র ১টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন অস্ট্রেলিয়া উদ্দেশ্যে। মিসেস: লাচাউ-এর স্বামী মি: অংশাচিং বাংলাদেশ ত্যাগের পূর্বে ২০১০ সালে ১৬ এপ্রিল তারিখে মোকাম পটুয়াখালী নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ের ২২৫ নং ক্ষমতা পত্র প্রদান করেন (১) মিঃ মংমিয়াচিং মাস্টার, পিতা-মৃত: পুষে কবিরাজ, (২) মোঃ ইউসুফ মুসুল্লী, পিতা: মো: কাদের মুসুল্লীর নিকট তার নিজ নামে ও এক স্ত্রী মিসেস: লাচাউ রাখাইন এবং তার দুই পুত্র মি: উওয়েনচিং ও মি: ম্যাওয়েনচিং এর নামে যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সকল সম্পত্তি দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এমনকি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ হতে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা মোকদ্দমা উদ্ভব হলে তার দেখাশুনা ও পরিচালনা করা জন্য ক্ষমতা প্রদান করেন। যা পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সকল রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন অবগত ছিল। এবং মি: অংশাচিং বাংলাদেশে অবস্থানকালীন রাখাইন বুডিষ্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন'বাংলাদেশ-এর পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে কুয়াকাটা রাখাইন কালচারাল একাডেমির ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালের স্বামী অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার দীর্ঘ ১১/১২ বছর পর মিসেস: লাচাউ প্রবাসে বসে স্বামীর নীল নকসার বাস্তবায়ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে একা ২০২২ সালে আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। আসার পর ২০০০ সালে তার নিজ স্বামীকে দেওয়া ৪৩০ নং পাওয়ার অফ এ্যার্টনী (আমোক্তারনামা) কে তিনি অস্বীকার করে সাব-কবলামূলে ক্রয়কৃত জমি মালিকদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রাণনাশের হুমকি ও মিথ্যা বানোয়াট মামলা প্রদান করতে থাকেন। এবং মিসেস: লাচাউ রাখাইন জেলা পর্যায়, স্থানীয় পর্যায় বিভিন্ন ভূমিগ্রাসীদের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করেন যা এখনও অব্যহত রয়েছে। তারই অতিলোভে বেশি লাভের আশায় এ ধরনের সন্ত্রাসী ও চাদাবাজদের ন্যায় কর্মকান্ডে অত্র রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রয়কৃত ভূমি মালিকদের বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। যা ভবিষ্যৎতে তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে অত্র এলাকার রাখাইন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব চরম হুমকির মধ্যে আছে
দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসা রাখাইন আদিবাসীরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নারী ও শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হুমকি ও হয়রানি বন্ধ এবং রাখাইন আদিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি জানানো হয়। দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত লাচাউ মগনী ও অংশাচিং অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আপনার মতামত লিখুন :