আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ২০ জন পাকিস্তানি তালেবান বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। সোমবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তৃতীয় দফার শান্তি আলোচনায় কোনো ফলাফল আসেনি, এ জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে দেশ দুটি। কাতার ও তুরস্কের সহায়তায় আলোচনাটি গত মাসে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের পর শুরু হয়েছিল। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কয়েক ডজন সেনা এবং বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিহত জঙ্গিদের ‘খোয়ারিজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সরকার নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপির জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করে। দলটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ উভয়ই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনীত করেছে।
এই গোষ্ঠীটি আফগান তালেবান থেকে পৃথক কিন্তু তারা মিত্র। ২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে দলটির কর্মকাণ্ড আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন থেকে অনেক টিটিপি নেতা এবং যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করা হয়। টিটিপি প্রায়ই পাকিস্তানে হামলার দাবি করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি হামলাও বেড়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিবৃতি অনুসারে, রবিবার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আগের টিটিপি ঘাঁটি, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আট জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত দারা আদম খেল জেলায় পৃথক অভিযানে আরো ১২ জন নিহত হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর কাবুলে ড্রোন হামলার জন্য আফগানিস্তান পাকিস্তানকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরবর্তী সংঘর্ষে সেনা, বেসামরিক নাগরিক এবং জঙ্গিসহ কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়। এরপর কাতার ১৯ অক্টোবর যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে, যা এখনও বহাল রয়েছে। এরপর ইস্তাম্বুলে দুই দফা আলোচনা হয়, যার মধ্যে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু কাবুল টিটিপি এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, এমন লিখিত আশ্বাস দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়।
সোমবার আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, কাবুল তার ভূখণ্ডকে কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি এই অচলাবস্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেন।
রবিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির পর তিনি বলেন, তারা সংলাপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে আফগানিস্তান থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে তাদের মূল উদ্বেগের বিষয়টি প্রথমে সমাধান করা প্রয়োজন।
২০২২ সালে কাবুল টিটিপি এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিল। কিন্তু টিটিপি পরে পাকিস্তানকে লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তা বাতিল করে দেয়। তারপর থেকে পাকিস্তান বলেছে, টিটিপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না এবং কাবুল যদি টিটিপি সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে তাদের পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে।
সূত্র: এপি

আপনার মতামত লিখুন :