ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

আমরা কি মাননীয় শব্দ বাদ দিতে পারি না, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯ জুলাই, ২০২৫, ১০:২২ রাত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার, এই মাননীয় কথাটাকে কি আমরা বাদ দিতে পারি না? তিনি বলেন, আমার কেন জানি মনে হয়, এই মাননীয় কথাটা থেকেই কিন্তু সমস্ত অটোক্রেসির জন্মটা বোধহয় হয়। আমাদের যেই মন্ত্রী হয়ে গেলো, সেই ভিন্ন জগতে চলে যায়।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনাল ২০২৫: ভয়েস অব ডেমোক্রেসি- রিথিংকিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি ও প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য বাংলাদেশ ডায়ালগ’।

গণতন্ত্রের চর্চা ছাড়া একটি দেশের সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকশিত হতে পারে না- এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভিন্নমতকে দমন নয়, বরং তার প্রকাশের পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “তর্ক-বিতর্ক ও মতের অমিল গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু একমতের বাইরে থাকা মানেই শত্রুতা- এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র এগোবে না। তিনি আরও বলেন, “আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। আমার মত প্রকাশের যেমন অধিকার আছে, তেমনি তোমারও আছে। দেশের জন্য এই অধিকার রক্ষা করা জরুরি। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধা না থাকলে গণতন্ত্র নিঃস্ব হয়ে পড়ে।”

বক্তব্যে তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন- মনে করছেন বাংলাদেশ দিয়ে কিছুই হবে না। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, এই তরুণরাই একদিন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। 

তরুণদের রাজনীতি বিমুখতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। “একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ রাজনীতিতে আগ্রহী। এটি মোটেও ভালো বার্তা নয়। রাজনীতি থেকেই নেতৃত্ব আসে—দেশ গড়ার দায়িত্ব সেই নেতৃত্বের হাতে।”

গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, এখানে গণতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি চর্চা হয়নি। এই দুর্ভাবনার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা যারা আজ রাজনীতি করি, তারা যদি স্বাধীন মত প্রকাশে সাহস দেখাই, তাহলে তরুণদের মধ্যে আবার আগ্রহ ফিরে আসবে।”

সভায় রাজনীতিকদের বাড়াবাড়ি আচরণ ও ক্ষমতার প্রদর্শন নিয়েও তিনি সরব হন। বলেন, “আমাদের দেশে মন্ত্রী হওয়া মানেই যেন তিনি এক আলাদা জগতে চলে যান। বাঁশি, স্যালুট, গাড়ির বহর— এগুলোই ধীরে ধীরে স্বৈরশাসনের মানসিকতা তৈরি করে। ‘মাননীয়’ শব্দটাও মানুষকে ডিক্টেটর বানিয়ে ফেলে। সেখান থেকে বের হতে হবে।”

কেন্দ্র ও প্রান্তের দূরত্ব কমানোর কথাও বলেন মির্জা ফখরুল। তার মতে, “ঢাকার সঙ্গে মফস্বলের ব্যবধান যতদিন থাকবে, ততদিন প্রকৃত উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। নতুন বাংলাদেশে বৈষম্য দূর করার জন্য এই দূরত্ব কমাতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস, অ্যাডকম হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কমিটির সদস্য ইশরাফি খসরু প্রমুখ।

আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৪ ও ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের মোট ৬৪টি বিতর্ক দল অংশ নেয়।

Link copied!