বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আগেই দুর্বল হলেও গত দুই দিনে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ার, বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, কৃষিজমি ও বেড়িবাঁধের। স্থানীয়দের ভাষ্য, এতে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। যদিও সরকারিভাবে তা এখন নির্ণয় করা যায়নি।
সাগরে প্রথম লঘুচাপ, তারপর সুষ্পষ্ট লঘুচাপ, পরে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ এবং শেষে তা ঘূর্ণিঝড় হয়। এবার শুরুর প্রক্রিয়াগুলো একই রকম ছিল। সম্ভাব্য ঘূণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শক্তি’।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, এই নিম্নচাপটি আরও শক্তিমাত্রা অর্জন করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে এটি আর সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’তে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেননা মৌসুমি বায়ু এবার সময়ের আগেই দেশে প্রবেশ করেছে। আর তা অনেকটাই সক্রিয়। এই সক্রিয়তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেয়নি।
রাঙ্গাবালীর মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলার এক হাজার ৩০০টি পুকুর এবং ৪৫০টি মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের আশাবাড়িয়া এলাকার ঘের মালিক লিটু গাজী বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার ঘের সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হলো।
একই এলাকার মিন্টু সরদার জানান, এই চরের প্রায় ৩০টির বেশি ঘের এক রাতেই শেষ। কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, আট হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ২৬০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১০০ মিটার সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন এলাকায় আরও ৩৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরআন্ডা এলাকায়ও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে তা এখনও নিরূপণাধীন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় জানিয়েছে, অন্তত ৬০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই দিনে দিন-রাতে জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ। জোয়ারের পানি ভাটায় নামলেও নিচু এলাকায় জমে আছে। কোথাও আবার বৃষ্টির পানি জমেছে। ফলে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন অসংখ্য পরিবার।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর সানি বলেন, জোয়ারে বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা ডুবে গেছে। ভাটায় পানি নামলেও রয়ে গেছে ক্ষতির ছাপ। নদী ভাঙনে নিঃস্ব, তার ওপর এই জলোচ্ছ্বাস- এখানে জন্মানোটা যে মনে হয় কোনো এক অভিশাপ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, দুর্গতদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব করে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :