ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে প্রস্তাবিত ‘বাবরি মসজিদে’ আজ প্রথমবারের মতো জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের রাজ্য নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু রাজনীতিতে এটিকে দেখা হচ্ছে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে। প্রথম জুমার নামের এই আয়োজন ঘিরে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও হাজারও মুসল্লির ভিড় দেখা গেছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় নামাজ আদায়ের এই ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। গত শনিবার এখানেই এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল থেকে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী এমএলএ হুমায়ুন কবির। ইসলামে জুমার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এদিন সাধারণত মুসল্লিদের উপস্থিতিও বেশি থাকে। প্রথম জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই শত শত মুসলমান মসজিদ এলাকার দিকে ছুটে আসছেন।
এদিকে নামাজ শেষে এক হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মসজিদের জায়গার পাশেই খিচুড়ি রান্না হচ্ছে; পাশেই একটি দলকে সবজি কাটতে দেখা গেছে। তাদের পেছনে রয়েছে মসজিদ নির্মাণের জন্য মানুষের দান করা ইটের স্তূপ। রান্নার দায়িত্বে থাকা একজন জানান, ‘এখানে এক হাজার মানুষ বিনামূল্যে খেতে পারবেন। আমরা দেড় কুইন্টাল চালসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ এনেছি’। আরেকজন বলেন, ‘মানুষকে খাওয়াতে পারলে সওয়াব হবে’। তাদের ধারণা, জুমার নামাজে উপস্থিতি লাখের ঘরে পৌঁছাতে পারে।
এর আগে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনই অর্থাৎ গত ৬ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবির। ১৯৯২ সালের ছয়ই ডিসেম্বর ভেঙে ফেলা হয়েছিল অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেসময় দেশজুড়ে আলোড়ন দেখা দেয়। আর সে কথা মাথায় রেখেই এই দিনকেই মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দিন হিসেবে বেছে নেন হুমায়ুন কবির।
তিনি ঘোষণা করেছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে ২৯৪ আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে প্রার্থী দেবেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মুসলিম ভোটব্যাংক শেষ করে দেবেন’। নিজেকে রাজনীতির ‘কিংমেকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম দলের সঙ্গে জোটের কথাও বলেন, যদিও এআইএমআইএম এখন পর্যন্ত এমন কোনো জোটের সম্ভাবনা নাকচ করেছে।
এর আগে তৃণমূল কংগ্রেস কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে জানায়, তারা ‘ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে’ বিশ্বাস করে। অন্যদিকে বিজেপি তার এই মসজিদ নির্মাণ উদ্যোগকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির প্রচেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জন্য মুসলিমরা অন্যতম প্রধান ভোটব্যাংক। তবে বিজেপি গত কয়েক বছরে সেখানে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠলেও তৃণমূল শেষ পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পায়।

আপনার মতামত লিখুন :