কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ‘অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশকারী’ আরাকান আর্মির এক সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি। সোমবার সকাল পৌনে ৯টায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী সীমান্ত দিয়ে আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা এক সদস্যের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বিজিবির উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
আটক জীবন তঞ্চঙ্গা (২১) মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্য। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি বিদেশি ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ও কিছু গুলি। কর্নেল জসিম উদ্দিন বলেন, সকালে উখিয়ার বালুখালী সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অস্ত্রসহ এক ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে তিনি বালুখালী ক্যাম্পের একটি সীমান্ত চৌকিতে বিজিবির সদস্যদের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে আশ্রয় চান। এ সময় বিজিবির সদস্যরা অস্ত্রটি জব্দ করে আরাকান আর্মির ওই সদস্যকে হেফাজতে নেন।
বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাটি তাৎক্ষণিক বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আরাকান আর্মির আটক সদস্যকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ায় তিনি অস্ত্রসহ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নিতে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এদিকে, দেড় বছরেরও বেশি সময় পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের ভেতর থেকে মধ্যরাতে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে; এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিজিবির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা বা আরএসও-এর মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। রোববার রাত ১০টার পর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানান বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম।
তিনি বলেন, মধ্যরাতে সীমান্ত পিলার ৩৪ ও ৩৫-এর মাঝামাঝি এলাকায় শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিটার ভেতরে মিয়ানমারে টানা ৭ থেকে ১০ মিনিট গোলাগুলি চলে। এতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। তবে সীমান্তের এপারে কোনো গুলি আসেনি। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা অথবা আরএসও-এর গোলাগুলি হতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।
ঘটনার পর বিজিবি টহলদলের সংখ্যা বাড়িয়ে সীমান্তে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল খায়রুল আলম। ওপারের তমব্রুর নারিকেল বাগান এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দুটি ক্যাম্প থাকায় স্থানীয়দের ধারণা সেখানে হঠাৎ বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ ভূট্টো বলেন, ‘দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর সীমান্তে গুলির শব্দ শুনেছি। অনেকক্ষণ অনবরত গুলির শব্দ পেয়েছি, সেখানে কী হচ্ছে তা বোঝা যায়নি। ফলে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে প্রতিরোধ শুরুর এক বছরেরও বেশি পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার রাখাইন অংশের পুরো ২৭১ কিলোমিটার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
আপনার মতামত লিখুন :