২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের দিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেদিন তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
তবে সেই চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে, ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী।সেদিন আদালতে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে সাঈদী আল্লাহর নামে শপথ করে বলেছিলেন, তিনি এই মামলার অভিযোগের সাথে জড়িত নন। তিনি দাবি করেন,
৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে তিনি আপামর জনগণের কাছে পরিচিত, কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তার উল্লেখিত 'দেলাওয়ার শিকদার' তিনি নন।
সাঈদী তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যুদ্ধাপরাধের দায় চাপাতে তাকে ব্যবহার করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠা করতে তার বিরুদ্ধে ২০টি জঘন্য অভিযোগ এনেছেন এবং তার নাম বিকৃত করেছেন।দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী তার বক্তব্যে ধর্মীয় অনুভূতি ও পরকালের জবাবদিহিতার বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, কোনো মুসলমানের আল্লাহর উপর বিশ্বাস থাকলে এবং পরকালের ভয় থাকলে সে আদর্শিক বা রাজনৈতিক শত্রুতার কারণেও এতো জঘন্য মিথ্যাচার করতে পারতো না।
তিনি বিচার প্রক্রিয়াকে দুটি পর্বের সাথে তুলনা করেন; একটি জাগতিক আদালত এবং অপরটি আখেরাতের আদালত। তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আজ তিনি অসহায় আসামি এবং বিচারকরা বিচারক হলেও, ক্ষমতার জোরে জুলুম করা হলে কিয়ামতের দিন তারাই আসামি হবেন এবং তিনি নিজে বাদী হবেন।সাঈদী সেদিন পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে কসম করে বলেছিলেন, তার নামে আনা অভিযোগগুলোর হাজার কোটি মাইলের মধ্যেও তার অবস্থান ছিল না এবং সব ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার নামের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বিচারকদের সকল প্রকার চাপ ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার করার আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, মিথ্যা মামলা ও সাক্ষী দিয়েছে, আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত করেন। আর হেদায়াত নসিবে না থাকলে, তাদের চোখের পানির অভিশাপ যেন ষড়যন্ত্রকারীদের উপর পতিত হয় এবং তারা যেন শতগুণ যন্ত্রণা ভোগ করার আগে মৃত্যুবরণ না করে।উল্লেখ্য, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পিরোজপুরে তার প্রতিষ্ঠিত মাওলানা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আপনার মতামত লিখুন :