নিজস্ব সংবাদদাতা:- ১ টি মামলায় কারাগারে বন্দি থেকে পুলিশের অস্ত্র চুরি হওয়ার মামলার আসামী হলো মনিরুজ্জামান রিফাত(২২) । এঘটনা ঘটে ফতুল্লা মডেল থানায় ১৪ মে। এর আগে ১১ মে সে একটি মাদক মামলায় আসামী হয়ে বর্তমানে নারায়নগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে। পুলিশের এ সুনিপুন অবহেলায় ফতুল্লায় এলাকায় চাঞ্চ্যলকর সৃষ্টি হয়েছে। মনিরুজ্জামান রিফাত দাপা ইদ্রাকপুর পাকিস্তনি বিল্ডিং এলাকার মো: শহিদুল ইসলাম লিটনের ছেলে।
সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে রাত ৭ টা ২০ মিনিটে পাগলা বাজার থেকে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই সাইফুর ৫২ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মনিরুজ্জামান রিফাত (২২)কে গ্রেপ্তার করে । এর পরের দিন দুপুরে ৫২ পিছ ইয়াবা ট্যবলেট মামলায় তাকে আদালতে প্রেরন করেন । আদালত তাকে কারাগারে প্রেরনের নিদের্শ দেন। এখনও পর্যন্ত মনিরুজ্জামান রিফাত নারায়নগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন এবং তার জামিন মঞ্জুর হয়নি। মামলা নং-৪১(৫)১৮।
এরপর গত ১৩ মে রাতে এএসআই সুমন কুমার পালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার বালুর মাঠে ডিউটিরত অবস্থায় গভীর রাতে কনষ্টেবল সোহেল রানার সঙ্গে থানা একটি চাইনিজ রাইফেল খোয়া যায়।
ঘটনার পরের দিন ১৪ মে সোমবার বেলা ১১ টায় দাপা ইদ্রাকপুর বালুর মাঠের পাশের একটি ডোবার মধ্যে থেকে রাইফেলটি উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশের এএসআই সুমন কুমার পালসহ তিন কনষ্টেবল মাসুদরানা, আরিফ, সোহেল রানাকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়। পরে সুমন কুমার পাল ১. পারভেজ, পিতা অজ্ঞাত,২. টিপু, পিতা অজ্ঞাত, ৩. রিফাত, পিতা সাইকেল লিটন ৪. নুর ইসলাম কালু, পিতা অজ্ঞাত সর্ব সাং দাপা ইদ্রাকপুর পাইলট স্কুল চারজনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ৫৪(৫)১৮। ১৫ মে মঙ্গলবার দিনগত রাত ২ টায় দাপা ইদ্রাকপুর বালুর মাঠে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে পারভেজ নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিভর্তি একটি রিভলবার ও ৩টি ছোড়া উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এ পর্যন্ত অন্য কোন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ মামলার ব্যাপারে খোজ নিয়ে একটি তথ্য বেরিয়ে আসে ৩ নং আসামী রিফাতকে নিয়ে। ১১ মে’র মাদক মামলায় কারাগারে বন্দি থেকে সে কি ভাবে পুলিশের আস্ত্রটি লুট করে নিল। উক্ত অস্ত্র লুটের মামলার ব্যাপারেও রিফাতের পরিবারের কেউ জানেনা। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন,পারভেজকে ধরতে গিয়ে সেতো পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয় কিন্তু পুলিশতো পারভেজকে আটকের পর কোন জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি যে অস্ত্র চুরির সময় কে বা কারা সম্পৃক্ত ছিলো। তাহলে উক্ত মামলায় জেলহাজতে থাকা রিফাত কিভাবে আসামী হয় ? তাহলে পুলিশ কি এক সোর্সকে প্রাধান্য দিতে আরেক সোর্সকে বন্ধুকযুদ্ধে…..।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়, পারভেজ ছিল মাদক ব্যবসায়ী ও সোর্স । পুলিশের অস্ত্রটি রাতে চুরি করে নিল আর সকালে অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ও সোর্সরা উদ্ধার করে দিল অল্প সময়ের মধ্যে এটা নিয়ে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে কিন্তু দেখিয়ে দেয়া সেই ব্যক্তিগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা আরও বলেন,বন্ধুকযুদ্ধে নিহত পারভেজকে নিয়ে স্থানীয় মাদক স্পটের লিডার ও পুলিশের সোর্স সোহেল রনি ওরফে ডাকাত রনির মাথা ব্যাথা ছিলো অনেকটাই বেশী। কারন হিসেবে তারা জানান,সোর্স রনির অধীনে রেললাইন ও আশপাশে প্রায় ১২/১৫টি মাদকের স্পট রয়েছে। রনির সাপোর্টে রয়েছে স্থানীয় কিছু বিশেষ পেশার কর্তাব্যক্তিরা এবং পুলিশতো রয়েছেই। রনির অধীনে থাকা মাদক স্পটগুলো প্রায় সময় পারভেজ বিভিন্ন পুলিশ দিয়ে অভিযান চালিয়ে আটক করাতো এবং এটাই যেন কাল হয়ে দাড়াঁয় পারভেজের জীবনে। আবদুল আউয়াল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,আইনের দৃস্টিতে সবাই সমান হলেও সোর্স রনির উপর তাদের দৃস্টি একটু ব্যতিক্রম ছিলো। কারন হিসেবে তিনি বলেন, ২/৩ জন সাংবাদিক ও পুলিশের সাথে গভীর সর্ম্পক ছিলো সোর্স রনির, তাই উভয়ের সার্বিক সহযোগিতায় নিজেকে বাচাঁতেই উক্ত সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়েই নাকি ৫৪ নং মামলায় রিফাতের নামটুকু সম্পৃক্ত করা হয় বলে জানান তিনি। রহিমুদ্দিন নামে অপর একজন জানান,পারভেজ নিহতের ঘটনার পরে পুলিশ যে মামলা করেছে সে মামলায় রিফাত কিভাবে আসামী হয় তা আমাদের বোধগম্য হয়না। কারন ঘটনার ৩/৪দিন পুর্বেতো রিফাত মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। আক্ষেপের সহিত সে জানান,যে দেশে মৃত ব্যক্তির নামেও থানায় মামলা হয় সেখানে জেলে থাকা মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা এটাতো নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা। ভাইগো আমাদের দেশের পুলিশের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। সে আরও বলেন,পারভেজ তার কৃত অপরাধের জন্য সাজা পেয়েছে কিন্তু তার বেশী মাপের অপরাধী সোর্স রনি ওরফে ডাকাত রনির বিরুদ্ধে কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সে বিষয়ে বুঝে উঠতে পারছিনা। এ ক্ষেত্রে পুলিশের রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে জনমনে শংকা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক মো.কাজি এনামুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,মুলত উক্ত মামলায় যে রিফাতের নাম দেয়া হয়েছে এ রিফাত সে রিফাত নয়। গত কয়েকদিন আগেও আমরা রিফাতকে ধরতে পিছু নিয়েছিলাম কিন্তু অল্পের জন্য ধরতে পারিনি রিফাতকে। তাছাড়া একই নামে অনেকেই থাকতে পারে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ‘ক’ সার্কেল ) মো.শরফুদ্দিন আহমেদ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,এ বিষয়টি ভালভাবে বলতে পারবে মামলার বাদী। তাছাড়া এ রিফাততো আর সে রিফাত নয়। আর যদি ভুলক্রমে পুলিশ জেলে থাকা রিফাতকে আসামী করে থাকে তাহলে মামলার বাদীই বুঝবে।