মোঃ মাসুদ হাসান মোল্লা রিদম: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দেশে চিরতরে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিং সেন্টার বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন।
আজ শনিবার(৩১ মার্চ ২০১৮) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘সততা সংঘের সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ শিরোনামের এক আয়োজনে এ আহ্বান জানান তিনি। ‘বন্ধ হলে দুর্নীতি, উন্নয়নে আসবে গতি’-এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শুরু হওয়া দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০১৮-এর ষষ্ঠ দিন ছিল আজ।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা, নিষ্ঠাবোধ ও চারিত্রিক দৃঢ়তা সৃষ্টি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি সর্বোপরি গণসচেতনতা গড়ে তোলার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি দেশের স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার সততা সংঘ গঠন করেছে। দেশের কোচিং সেন্টরগুলো অবৈধ ও দুর্নীতির আখড়া বলে মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এসব কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে।
কোচিং সেন্টারের দুর্নীতি বন্ধ করতে দুদক বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি। সরকারের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই আগামী প্রজন্মের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে যেকোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং কোচিং বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ করতে হবে। আমাদের সন্তানরা সারা দিন কোচিং সেন্টারে সেন্টারে ঘুরে বেড়াবে তা হতে পারে না।’সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ‘বাংলাদেশের সব কোচিং সেন্টার অবৈধ’। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে দুদক-প্রধান বলেন, ‘আমরা বলতে চাই সব কোচিং সেন্টর শুধু অবৈধ নয় দুর্নীতির আখড়াও।
আমরা সরকার, ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক সবাইকে অনুরোধ জানাই- আসুন, এই অবৈধ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিই।’ শিক্ষিত জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা শিক্ষকদের এ ক্ষেত্রে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন ইকবাল মাহমুদ। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, বেতন বৃদ্ধিসহ সব ধরনের উন্নয়নে দুদক পাশে থাকবে। তবে আপনারা শ্রেণিকক্ষে এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করুন যাতে আমাদের সন্তানদের কোচিং সেন্টারে যেতে না হয়।’ শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দুদক চেয়ারম্যান সরকারের উদ্দেশে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, মর্যাদা আরও বাড়ানোর পক্ষে জোর দেন।
দেশের প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা বিস্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই সচিব। এক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে যে ১১টি দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তাদের শক্তি, সক্ষমতা ও সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।’ ‘এ+ প্লাস’ কিংবা ফলাফলের পেছনে না ছুটে পরিপূর্ণ ও নির্মোহভাবে জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করার জন্য সব শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দেন দুদক চেয়ারম্যান।
সততা সংঘের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করিয়ে দুদক চেয়ারম্যান জানান, ভবিষ্যতে দুদকের কার্যক্রম সততা সংঘের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির কমিশনার নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব মো. শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. জাফর ইকবাল।