শহিদুল আলম,পটুয়াখালী: উচ্চালদতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কুয়াকাটায় ফ্রি ষ্টাইলে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মান। প্রশাসনের নাকের ডগায় ভুমি দস্যূরা যে যার মত করে চালিয়ে যাচ্ছেন দখল বানিজ্য। খাস জমি, সৈকতের বেলাভুমি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ন খাল-নালাসহ কিছুই বাদ যাচ্ছেনা তাদের কালো থাবা থেকে। এ যেন মগের মুল্লুক চলছে এখানে। এলোমেলো এসব স্থাপনায় শ্রীহিন হয়ে পড়েছে দেশের একমাত্র সুর্য্যদোয় ও সুর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এই লীলা ভূমি।
২০১১ সালের ২ জুন পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে দুটি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তাছাড়া কোথাও কোন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা যাবেনা বলেও উল্ল্যেখ রয়েছে এ আদেশে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একটি রিট (পিটিশন নং-৫১৬২/২০১১) আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও গোবিন্দ ঠাকুরের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ওই ১৮ আগস্ট তৎকালীন জেলা প্রশাসক গোলাম মো: হাসিবুল আলম উচ্চাদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। তারা সৈকত এলাকা জরিপ করে খসড়া ট্রেসম্যাপ করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণ করেন। পশ্চিম দিকে আন্ধারমানিক নদীর মোহনা এবং বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থল থেকে কাউয়ারচর মৌজার উত্তরপুর্ব সীমানার রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত সৈকত এলাকা নির্ধারন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন এর প্রেক্ষিতে দুই’শতাধিক স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে সমুদ্র সৈকতের এ সীমানার মধ্যে কোন ধরনের স্থাপনা তোলা নিষিদ্ধ আইন জারি করেন।
কিন্তু চোরে শেনেনা ধর্মের কাহিনী। দেখলে মনে হবে যেন দখলের প্রতিযোগীতায় মরিয়া হয়ে উঠেছে ভূমি দস্যুরা। যার মত করে দখল করে নিচ্ছে এখানের সরকারি পতিত জমি। নির্মান করা হয়েছে পাকা বাস ভবন আর আবাসিক হোটেলসহ নানা ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় নতুন করে আরও ১৮টি অবৈধ স্থাপনা তোলা হয়।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভুমি অফিস, পৌর প্রশাসন আর গুটি কয়েক ক্ষমতাবানরা গিলে খাচ্ছে কুয়াকাটার বেলা ভূমিকে। সবাইকে ম্যানেজ করে তা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আসলে এদের খুটির জোড় কোথায়? এমন প্রশ্ন আমজনতার মুখে মুখে থাকলেও কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা এসব রাঘব-বোয়ালদের। আর গনমাধ্যমে এ নিয়ে বার বার শিরোনাম হলেও উচ্ছেদের নামে প্রশাসন আর ভুমি অফিসের মধ্যে চলছে লুকোচুরি খেলা। দায় চাপাচ্ছেন একে অপরকে। এমন অভিযোগ করলেন স্থাণীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, কুয়াকাটার দৃষ্টি নন্দন ফয়েজ মিয়ার সেই ঐতিহাসিক নারকেল বাগানের পিকনিক স্পটের শেষ চিহ্নটুকু এখন বাজারে পরিনত হয়েছে। পর্যটকদের অনায়াসে চলাচল করতে যে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে তাতে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি দোকান। অনুসন্ধানে জানাগেছে, পিকনিক স্পটের কথিত কেয়ার টেকার আবদুল কুদ্দুস এর সবই নিয়ন্ত্রন করছেন। দোকান প্রতি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছেন কুদ্দুস।
কথিত এই কেয়ার টেকার কুদ্দুস অনেক খোঁজাখুজির পর পাওয়া গেলে সাংবাদিকদের জানান, স্থাণীয় ভুমি অফিসের তহশলিদার মো: সেলিম মিয়ার নির্দেশে তিনি বালু দিয়ে ভড়াট করে স্থাপনা তৈরী করেছেন। তিনি আরো বলেন আমি শুধু হুকুমের গোলাম। কিন্তু কালেকশনসহ সবই নিয়ন্ত্রন করেন সেলিম তহশীলদার। প্রশাসনের অনুমোতি না নিয়ে স্থাপনা তৈরী করা ঠিক হয়নি। এমন সত্যতা স্বীকার করে কুদ্দুস জানান, সরকার চাইলেই ছেড়ে দিবেন।
এদিকে দক্ষিানাঞ্চলের ডিজিটাল ভূমি দস্যুখ্যাত স্থাণীয় সাংসদ মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মনির ভূইয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১ একর জমি দখল করে নির্বিঘে মার্কেট নির্মান করছেন। যার কাজ চলমান রয়েছে। এমন অভিযোগ করলেন স্থাণীয়রা। তবে এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের সাংবাদিক জানান, এ গুলো উচ্ছেদের জন্য প্রধান প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান সরদার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য সবার সহযোগীতা চেয়েছেন তিনি।
এদিকে শহরের প্রান খ্যাত ঘাটলার খাল দখল করে মাছ বাজার তৈরী করা হয়েছে। স্থাণীয় ভূমি দস্যু শিরোমনি কুয়াকাটা পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল বারেক মোলাøা তা নিয়ন্ত্রন করছেন। এমনটাই জানালেন ভাড়াটে দোকানীরা
ময়মনসিংহ থেকে আসা পর্যটক রাকিব হাসান বাবলু জানান, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক রূপ দেখে মুগ্ধ তিনি। তবে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললেন। প্রভাবশালীরা যেভাবে বেলাভুমি দখল করে এলোমেল দোকাট-পাট গড়ে তুলেছেন। তাতে অনায়াসে চলাচল করতে দারুন সমস্যা হচ্ছে তাদের। এতে বেশ বিরক্ত তারা। তিনি আরো জানান যেখানে উচ্চাদলতের নিষেধ রয়েছে। তার তোয়াক্কা না করে স্থাণীয় ভুমি অফিসের সখ্যতায় ক্ষমতাবানরা এসব করছে। আইন কি আসলে অন্ধ হয়ে গেল এখানে? যেখানে দেখার কেউ নেই।
তবে এব্যাপরে স্থাণীয় তহশীলদার সেলিম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি তিনি। বললেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে। তবে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে কুয়াকাটার সকল স্থাপনা তুলে দেয়া হবে। কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার এমন জোড়ালো ইঙ্গিতের ১০ দিন পেরুলেও তা কোন কাজে আসেনি।
এ দিকে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমান জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মৌখিকভাবে বলা সত্ত্বেও তা তুলে নিচ্ছেনা। তবে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে দখলদারদের তালিকা করে মামলা নোটিশের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরন করেছেন। তার নির্দেশমতে কাজ করবেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী জানান, মামলা নথি তৈরী হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এসব স্থাপনার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে দখল মুক্ত করবেন বলে জানান তিনি।