আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে॥ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপণা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে কুয়াকাটায় উৎযাপিত হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসব। এবার মেলায় লাখো পুর্নাথী ও দর্শণার্থীদের আগমন ঘটেছে বলে আয়োজক কমিটি জানান । তিন ব্যাপী এ রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে পূণ্যার্থী দর্শণার্থীদের এক মিলন মেলা বসেছিল সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। মেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন পুলিশ,থানা পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।
শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরে রাতভর শ্রী কৃঞ্চের অরাধণা, ভগবত পাঠ সহ ধর্মীয় রীতি অনুসরন শেষে রবিবার ভোর রাতে গঙ্গাস্নান শেষে যার যার গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছে পুণ্যার্থীরা। ১২- ১৪ নভেম্বর তিনব্যাপী এ মেলায় প্রথম দিন পুণ্যার্থীরা কম আসলেও রোববার বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুণ্যার্থী এবং দর্শণার্থীরা সমুদ্র সৈকতে এসে ঝড়ো হয়। গতকাল সোমবার দিনবর চলবে গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসব। তবে এবার আবাসিক হোটেল, মোটেল গুলোতে তেমন কোন চাপ ছিলনা বলে হোটেল মেটেল সংগঠন সুত্রে জানান। মেলায় প্রায় তিন শতাধিক ভাসমান দোকান বসেছিল। হরেক রকম বাহারী মেলা সামগ্রীর পসরা বসেছিল। বেচাকেনাও হয়েছে ভালো বলে জানান ব্যবসায়িরা। তবে ব্যবসায়িরা অভিযোগ করেছেন পৌর ট্যাক্স্র ট্যাক্সের নামে এবং সৈকতে দোকানের পজেশন দেয়ার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার উদ্বোধন করেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকি।
প্রতি বছরের মত এবারও ১৭ জোড়া রাধাকৃষ্ণ যুগল প্রতিমা স্থাপন করা হয় কুয়াকাটার শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে। সেখানে রোববার রাতভর চলে পদাবলি কীর্তন.পুঁজো-অর্চনা আর নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পরে ঊষা লগ্নে সমুদ্র ¯œানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় মেলার। সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে, প্রায় দুই শ’ বছর আগে দাপর যুগে কংস রাজার অত্যাচারে মানবকুল যখন অতিষ্ঠ। তখন আগমন হয় ভগবান শ্রী কৃষ্ণের। তিনি অলৌকিকভাবে অত্যাচারী রাজাকে হত্যা করে মানবকুলকে রক্ষা করেন। পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রী রাধিকাকে নিয়ে বৃন্দাবনের কদম কুঞ্জে এক লীলা বিলাস প্রেমের উপাখ্যান রচনা করেন। সেই থেকেই হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ মেলা প্রথা চালিয়ে আসছেন। জমকালো আয়োজনে বেশ খুশী পুর্নার্থী সহ পর্যটকরা।
হোটেল মোটেলসহ পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের বেচা-বিক্রি ভাল হওয়ায় চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাঁসির ঝিলিক। শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরের পুরোহিত শিশির মহারাজ বলেন,অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় আর সারম্ভে রাস মেলা পালন করতে পেরে তারা আনন্দিত । এ জন্য সরকারের পাশাপাশি প্রশাসনকে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান তারা।
কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মীর ফঁসিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান,প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা ছিল। এ কারনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
রবিবার সন্ধ্যায় রাস মেলার মুল উৎসব আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক সিদ্দিকি বলেন,কুয়াকাটায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গা¯œান ও রাস মেলা অনুষ্ঠানটি এখন জাতিয় পর্যায় পৌছে গেছে। আগামীতে এ মেলায় আরো পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বছর ঘুরে এই রাস মেলায় আরো আনন্দঘন পরিবেশে উপভোগ করতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
[vsw id=”EbT_sEIXp7Y” source=”youtube” width=”500″ height=”300″ autoplay=”yes”]